মেডিকেল এবং বায়োসেফটি বিবেচনায় বেশ কয়েক রকমের পিপিই রয়েছে। এদের মধ্যে আবার স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় পিপিইগুলোর রয়েছে বিভিন্ন মাত্রা—লেভেল-১, ২, ৩, ৪; এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য—স্টেরাইল, নন-স্টেরাইল, ডিস্পজেবল, ওয়াটার রেজিস্টেন্স ইত্যাদি।
তাই ব্যবহারকারীকে অবশ্যই জানতে হবে তার কোন পিপিই প্রয়োজন এবং সেটি কোন লেভেলের এবং কোন বৈশিষ্ট্যের। ব্যাপারটি যে খুব সহজ তা নয়। বিশেষ করে পিপিই–সংক্রান্ত তথ্যবিভ্রাট, সঠিক পিপিই না থাকা, মানহীন বা নকল পিপিই সহজলভ্যতা এবং দেশে পিপিই–সংক্রান্ত নীতিমালা না থাকা ব্যাপারটিকে বেশ জটিল করে তুলেছে।
আশার কথা হচ্ছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে ঔষধ প্রশাসন ডব্লিউএইচও, জেআইসিএ এবং ইউএসএআইডির সহযোগিতায় কোভিড-১৯ সংক্রমণকে সামনে রেখে ডব্লিউএইচও–পিএএইচওর নির্দেশিকা অনুসরণ করে পিপিই প্রস্তুত এবং বাজারজাতের নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই পিপিইর গুণগতমান নির্ধারণে বিভিন্ন প্যারামিটারের মান নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখন থেকে যারা দেশে পিপিই তৈরি করবেন অথবা আমদানি করবেন, তারা এই নীতিমালা মেনে ঔষধ প্রশাসন থেকে অনাপত্তি ছাড়পত্র নিয়ে দেশে পিপিই বাজারজাত করবেন। এ ছাড়া দেশের যেসব উদ্যোক্তা বিদেশ পিপিই রপ্তানি করতে চান, তারাও এই নীতিমালার সুবিধা নিতে পারবেন।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সংস্থায় উন্নত মানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছে আরমার পলিমার লিমিটেড।
পিপিই তৈরি এবং রপ্তানিতে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি করোনাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করছে এসব পণ্য।
বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিশেষ করে পিপিই-গাউন এর মান যাচাই এর বিষয় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গাউন, শু কভার, সার্জিক্যাল ক্যাপ, মাস্ক ইত্যাদি সামগ্রী তৈরি করে বাজারে ছাড়ার আগে কমবেশি আট ধরনের টেস্ট করাতে হয়।
এরমধ্যে পিপিই গাউনের কথা বললে লেভেল-১ এর জন্য এএটিসিসি ৪২ বা ইমপ্যাক্ট পেনিট্রেশন টেস্ট করাতে হবে।
লেভেল ২ ও ৩ গাউনের জন্য এর সাথে এএটিসিসি ১২৭ বা হাইড্রোস্ট্যাটিক প্রেশার টেস্ট করাতে হবে।
আর লেভেল ৪ এর জন্য এগুলোর সঙ্গে ভাইরাস পেনিট্রেশন টেস্ট করাতে হবে। এগুলোর মধ্যে লেভেল ৩ এবং ৪ গাউন ফ্রন্টলাইনার চিকিৎসকদের জন্য। আমরা সম্প্রতি ১ লাখ পিস লেভেল ২ ও ৩ পিপিই সেট বিদেশে রপ্তানি করেছি। একইসঙ্গে লেভেল ৪সহ আরও ৫৫ লাখ পিপিই গাউন রপ্তানির কার্যাদেশ আছে আমাদের।
আমাদের সব পণ্যই এসব পরীক্ষায় বড় মার্জিন রেখে উত্তীর্ণ। এসব উৎপাদনের অনুমতি এবং ছাড়পত্র আছে আমাদের। আইএসও ১৩৪৮৫, এসজিএস এবং ইন্টারটেক এর সনদও আছে আমাদের।
একজন গ্রাহক যখন এসব সামগ্রী ক্রয় করবেন বিশেষ করে পিপিই গাউন তাকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। যেহেতু তারা খুচরা গ্রাহক তাই হয়তো বিক্রেতার কাছ থেকে সব তথ্য পাবেন না তবুও কিছু জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যেমন পণ্যগুলোর উৎপাদকের এসজিএস, ইন্টারটেক এবং আইএসও সনদ আছে কি-না। গাউনের সেলাই দেখতে হবে; নরমাল নাকি ওভারলক স্টিচ। ফেব্রিক কি সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ; এসএমএস অথবা এসএফএস ফেব্রিক হতে হবে। আমরা অনেক সময়েই রি-ইউজেবল পিপিইর কথা শুনি। কিন্তু এসব পণ্য তৈরিতে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ডুপন্ট এর গত এপ্রিলের আগ পর্যন্ত পরামর্শ ছিল পিপিই গাউন রি-ইউজেবল না। সম্প্রতি তারা বলছে যে, পলি লেয়ার হিট স্টেপিং যুক্ত পিপিই পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। কাজেই কেউ যখন আপনাকে বারবার ব্যবহার করা যাবে এমন দাবি করে পিপিই গাউন দিতে চাইবে তখন এই বিষয়গুলো দেখে নিন।
তারা বলেন, আমরা যারা অধিক সংখ্যায় অনুমোদিত পিপিই গাউন উৎপাদন করি তাদেরও ধরন ভেদে উন্নত মানের গাউন তৈরিতে প্রায় হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়ে যায় প্রতি পিসে।
কিন্তু বাজারে দেখবেন বিশেষ করে ফুটপাতে এবং কিছু অনলাইন শপে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়ও পিপিই বিক্রি করছে।
রেইনকোটের কাপড় দিয়ে তৈরি করে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে। এগুলোর মান কেমন তাহলে অনুমান করে নিন। পিপিই সম্পর্কে স্বল্প তথ্য জ্ঞান এবং দাম কম বলে অনেকেই হয়তো এগুলো কিনছেনও। কিন্তু কিছু টাকার বিনিময়ে নিজের ও পরিবারের সবার জীবন ঝুঁকিতে ফেলা কি ঠিক হবে?